সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০২৬: বছরের এই সময়টা এলেই দেশের অগণিত অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের ব্যস্ততা এবং কিছুটা উৎকণ্ঠা কাজ করে। সন্তানের ভালো স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জিং ভর্তি প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে যাচ্ছে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ২০২৬
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (DSHE) অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলের স্বাক্ষর করা এই বিজ্ঞপ্তিটি সারা দেশের অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
খুশির খবর হলো, এ বছরও ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারি (Digital Lottery) প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
২১ নভেম্বর বেলা ১১টা থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আপনার সন্তানের ভর্তির এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি যেন কোনোভাবেই ভুল না হয়, সেজন্য আমরা এই প্রতিবেদনে পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে তুলে ধরছি।
এই লেখায় যা জানবেন:
- ভর্তির গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও সময়সীমা
- অনলাইনে আবেদনের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
- প্রথম শ্রেণির ভর্তির বয়সসীমা (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)
- আবেদন ফি এবং পেমেন্ট পদ্ধতি
- বিদ্যালয় পছন্দের নিয়ম ও শিফট নির্বাচন
- বিশেষ কোটা ও সংরক্ষিত আসনের বিস্তারিত
ভর্তির সময়সূচি ও মূল তথ্য (এক নজরে)
যেকোনো কাজের আগে তার সময়সীমা জানাটা জরুরি। সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এই তারিখগুলো আপনার ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখুন।
| বিষয় | তারিখ ও সময় | মাধ্যম |
| অনলাইন আবেদন শুরু | ২১ নভেম্বর ২০২৫ (বেলা ১১:টা) | https://gsa.teletalk.com.bd |
| অনলাইন আবেদন শেষ | ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ (বিকেল ৫:টা) | https://gsa.teletalk.com.bd |
| আবেদন ফি | ১০০ টাকা (প্রতি আবেদন) | শুধু টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল (SMS) |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আবেদনপত্র পূরণ এবং ফি জমা দেওয়া দুটি ভিন্ন ধাপ। আবেদন সাবমিট করার পর প্রাপ্ত User ID ব্যবহার করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ফি জমা দিতে হবে। শেষ দিনের জন্য অপেক্ষা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আবেদন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে গাইড (How-To Apply)
অনলাইন প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ, তবে ছোট একটি ভুলেও আপনার সন্তানের আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিটি ধাপ মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করুন।
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ
ভর্তির জন্য বিদ্যালয় থেকে কোনো ফরম বিতরণ করা হবে না। আবেদন করতে হবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্ধারিত একমাত্র পোর্টালে: gsa.teletalk.com.bd।
ধাপ ২: আবেদন ফরম পূরণ
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “Apply Now” বাটন চেপে প্রয়োজনীয় তথ্য দিন। এখানে শিক্ষার্থীর অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (Online Birth Certificate) নম্বর, ঠিকানা, অভিভাবকের তথ্য এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিবরণ লাগবে। ফরম পূরণের আগেই জন্মনিবন্ধন সনদটি হাতের কাছে রাখুন।
ধাপ ৩: বিদ্যালয় ও শিফট নির্বাচন
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
- আবেদনকারীরা তাদের থানাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখতে পাবেন।
- একজন শিক্ষার্থী প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ ‘পাঁচটি’ বিদ্যালয় পছন্দের ক্রমানুসারে (Priority) নির্বাচন করতে পারবে।
- যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে ডাবল শিফট (প্রভাতী ও দিবা) থাকে এবং আপনি উভয় শিফটেই আবেদন করতে চান, তবে সেটিকে ‘দুটি পছন্দক্রম’ হিসেবে গণ্য করা হবে।
- একই বিদ্যালয় বা শিফট দুবার পছন্দ করা যাবে না।
ধাপ ৪: ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড
আবেদনপত্রে শিক্ষার্থীর সদ্য তোলা রঙিন ছবি (JPG format) এবং অভিভাবকের স্বাক্ষর (যদি প্রযোজ্য হয়, সাধারণত প্রয়োজন হয় না) আপলোড করতে হবে। ছবির মাপ ও সাইজ ওয়েবসাইটের নির্দেশনায় দেওয়া থাকবে।
ধাপ ৫: আবেদন সাবমিট ও User ID সংগ্রহ
সব তথ্য ঠিক থাকলে আবেদনটি ‘Submit’ করুন। সাবমিট করার পর আপনি একটি Application Preview দেখতে পাবেন। সব তথ্য শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ‘Final Submit’ করলে আপনি একটি User ID পাবেন। এই User ID টি সাবধানে সংরক্ষণ করুন, কারণ এটি দিয়েই ফি প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৬: টেলিটক-এর মাধ্যমে ফি প্রদান
User ID পাওয়ার পর টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে ১০০ টাকা আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
-
প্রথম SMS:
GSA<space>User IDলিখে পাঠিয়ে দিন16222নম্বরে। (ফিরতি SMS-এ একটি PIN পাবেন) -
দ্বিতীয় SMS:
GSA<space>YES<space>PINলিখে পাঠিয়ে দিন16222নম্বরে।
সফলভাবে পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আপনি একটি কনফার্মেশন SMS পাবেন।
প্রথম শ্রেণির ভর্তির বয়সসীমা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা জানা দরকার
অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো বয়স। বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
- মূল নীতি: জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ছয় বছরের বেশি হতে হবে।
- বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা: তবে, ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের একটি সুনির্দিষ্ট উইন্ডো দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর বয়স সর্বনিম্ন পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারবে।
-
Featured Snippet টার্গেট: প্রশ্ন: ২০২৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ জন্ম তারিখ কত? উত্তর: সরকারি স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ (সর্বনিম্ন বয়স) থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ (সর্বোচ্চ বয়স)-এর মধ্যে হতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সনদ: শিক্ষার্থীর বয়স প্রমাণের জন্য অবশ্যই অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (Special Needs) শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।
লটারি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া: স্বচ্ছতা এবং ভাগ্য
এটা মনে রাখা জরুরি যে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। এটি সম্পূর্ণ ভাগ্য-নির্ভর একটি প্রক্রিয়া।
১. ডিজিটাল দৈবচয়ন (Digital Lottery): কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই লটারি অনুষ্ঠিত হবে। এতে কোনো ধরনের মানবিক হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
২. কোনো ভর্তি পরীক্ষা নয়: শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল লটারি ব্যতীত অন্য কোনো ধরনের পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৩. লটারির তারিখ: সারা দেশের লটারির তারিখ, সময় ও স্থান এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এটি পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dshe.gov.bd) এবং টেলিটকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিশেষ কোটা ও সংরক্ষিত আসন
বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বিশেষ কোটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা জানা থাকা ভালো।
শিক্ষক/কর্মচারীদের সন্তান
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক বা কর্মচারীদের ভর্তির উপযুক্ত সন্তানদের জন্য নিজ বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত থাকবে।
- এসব ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের প্রয়োজন নেই।
- তবে, যদি কোনো শিক্ষক বালক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকেন এবং তার সন্তান বালিকা হয়, তবে কাছের বালিকা বিদ্যালয়ে তার জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে (এবং উল্টোটা)।
- সহশিক্ষা (Co-education) বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কর্মরত প্রতিষ্ঠানেই আসন সংরক্ষিত থাকবে।
সরকারি স্কুলে সন্তানের ভর্তি একটি বড় স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হলো সঠিকভাবে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। মনে রাখবেন, ডিজিটাল লটারিতে ভাগ্য আপনার সহায় নাও হতে পারে, কিন্তু আবেদনে ভুলের কারণে যেন আপনার সন্তান প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে না যায়, তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব।
সময় হাতে থাকতে থাকতেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বিশেষ করে সন্তানের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ প্রস্তুত রাখুন। ৫ ডিসেম্বরের জন্য অপেক্ষা না করে আগেই আবেদনটি সম্পন্ন করুন।
এই ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন বা অভিজ্ঞতা থাকলে কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানাতে পারেন। আপনার পরিচিত অন্য অভিভাবকদের সহায়তার জন্য আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
সূত্র: gsa.teletalk.com.bd